
প্রকাশিত: Wed, Apr 12, 2023 2:17 PM আপডেট: Tue, Jun 24, 2025 8:29 PM
গণমানুষের স্বাস্থ্যসেবার অগ্রদূত
মোহন রায়হান : নিজের ক্যারিয়ারকে তোয়াক্কা না করে এফআরসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত পর্ব শেষ না করেই মাতৃভূমির বিপর্যস্ততায় লন্ডন থেকে ভারতে ছুটে এসে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন দেশ মাতৃকার বীর সন্তান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। আগরতলার মেলাঘরে গেরিলা প্রশিক্ষণ শেষে ৪৮০ শয্যা বিশিষ্ট ‘বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল’ প্রতিষ্ঠা এবং পরিচালনা করেন যে দেশপ্রেমিক, তার পক্ষই তো সম্ভব মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অঙ্গীকার জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে ‘গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠার।
বিশ্বচিকিৎসা সাম্রাজ্যবাদের অন্যতম দোসর বাংলাদেশের প্রচলিত বাণিজ্যিক চিকিৎসা সিন্ডিকেটের জাতীয় লুণ্ঠনের বিপরীতে জনগণের চিকিৎসাসেবায় আজীবন নিয়োজিত থাকা, গণমানুষের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করা, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার, ভোটাধিকার, শোষণ, লুণ্ঠন, নিপীড়ন, সাম্প্রদায়িকতাÑ এককথায় মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে আপোসহীন সংগ্রামী, সর্বদা সোচ্চার, বাংলা মায়ের নিবেদিত সন্তান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর চির বিদায় দেশ ও জাতির অপূরণীয় ক্ষতি। গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি এই অকুতোভয় গণমানুষের নয়নের মনিকে। অকৃত্রিম অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা আর ভালবাসা জানাই মানবিক এই মানুষটিকে।
স্মরণ করতে চাই ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মহানুভবতা। ১৯৮২ সালে এরশাদ যখন ক্ষমতায়, জাফরুল্লাহ চৌধুরীর উদ্যোগে বাংলাদেশের ওষুধনীতি প্রণীত হয়। তৎকালীন ‘বিএমএ’ এই ওষুধনীতির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে। অবৈধ ক্ষমতা দখলদার স্বৈরাচারী এরশাদ এই ওষুধনীতি গ্রহণ করে বলে আমরা তৎকালীন ‘ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ এর বিরোধিতা করি। এরশাদের শাসনামলে কোনো এক হরতালের দিন ডা. শহীদ মিলনসহ আমরা জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ধানমন্ডির ‘গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র’ আক্রমণ করে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করি।
২০০৯ সালে আমি যখন বাংলাদেশে, সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম নন সার্জিক্যাল হার্ট কেয়ার সেন্টার ‘সাওল হার্ট সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করি, ভারতের বিশিষ্ট হৃদরোগ ও লাইফস্টাইল বিশেষজ্ঞ ডা. বিমল ছাজেড়কে বাংলাদেশ নিয়ে এসে জনসচেতনতামূলক হার্ট ও লাইফ স্টাইল সেমিনারের আয়োজন করি তখন চারিদিকে একটা সাড়া পড়ে যায়। পত্র-পত্রিকায়, রেডিও টেলিভিশনে বেশ লেখালেখি ও প্রচার করা হয়।
জাফর ভাই আমাকে তাঁর একজন সহকারী ডাক্তারকে দিয়ে ফোন করিয়ে ডেকে নিয়ে যান। বলেন, মোহন, তোমার নেতৃত্বে আমার এই সেন্টারে ভাঙচুর এবং আগুন দেওয়া হয়েছিল সেটা আমি জানি। তবু তোমাকে আমি আজ ডেকে নিয়ে এসেছি। কারণ তুমি একটা ভালো উদ্যোগ নিয়েছো। এইটাই চিকিৎসার আসল কাজ। জনসচেতনতা সৃষ্টি করা। মানুষকে বোঝাতে হবে কী কারণে অসুখ হয় এবং কীভাবে রোগ প্রতিরোধ করা যায়। কিন্তু আমরা ডাক্তাররা কেউ তা করছি না। তুমি একজন কবি হয়ে সেই উদ্যোগ নিয়েছো। আমি তোমার এই মহৎ উদ্যোগের সাথে আছি। এরপর ডা. ছাজেড় যখন বাংলাদেশে আসবেন তুমি আমার এখানে তাঁকে নিয়ে আসবে। আমি ডা. ছাজেড়কে দিয়ে আমার চিকিৎসক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য একটা সেমিনারের আয়োজন করতে চাই, সাওলের নতুন ধারার চিকিৎসা পদ্ধতি, ফুডহ্যাবিট এবং লাইফস্টাইল সম্পর্কে একটা লেকচার দেওয়াতে চাই। আর এখন তোমরা আমাদের ধানমন্ডি সেন্টারে একটা সেমিনার আয়োজন করো।
আমরা ধানমন্ডি ‘গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের’ অডিটোরিয়ামে তাঁর ডাক্তার,নার্স, কর্মচারীদের নিয়ে ডা. ছাজেড়ের একটি ভিডিও বক্তব্যসহ সেমিনার আয়োজন করি। তিনি নিজে সেই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন। বক্তৃতায় ডা. ছাজেড়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং আমাকেও অনুপ্রাণিত করেন। বাংলাদেশে সাওল চিকিৎসা পদ্ধতি ছড়িয়ে দিতে তাঁর অকৃপণ সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন।
পরবর্তী সময়ে ডা. ছাজেড় যখন বাংলাদেশে আসেন তিনি তখন সাভারে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, কর্মচারীদের জন্য একটি প্রশিক্ষণমূলক কর্মশালায় আয়োজন করেন। সেই কর্মশালায় কয়েকশো ছাত্র-ছাত্রী-শিক্ষক, কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে ডা. ছাজেড় কয়েক ঘন্টাব্যাপী লেকচার দেন। অংশগ্রহণকারীরা এতটাই মুগ্ধ, অভিভূত এবং উদ্বুদ্ধ হন যে, লেকচার শেষে সবাই ডা. ছাড়েড়কে ঘিরে ধরে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানান আর তাঁর অটোগ্রাফ সংগ্রহ করেন। অনেকেই বলেন, আমরা এরকম লেকচার জীবনে কখনো শুনিনি। চিকিৎসা ক্ষেত্রে আপনি আমাদের একটি নতুন দিগন্তের, নতুন ফিলোসফির সন্ধান দিলেন। সেজন্য আমরা চিরদিন আপনার কাছে ঋণী থাকবো। আমরা আপনাকে ভুলবো না। আপনাকে অনুসরণের চেষ্টা করব।
জাফর ভাই ডা. বিমল ছাজেড়ের ৩৫ মিনিটের একটি ভিডিও বক্তব্য গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে সর্বক্ষণ প্রচারের নির্দেশ দেন এবং বেশ কিছুদিন সেটা চালু ছিলো। জাফর ভাই আমাদের হেলথ ম্যাগাজিন এবং নানা কর্মসূচিতে বিজ্ঞাপন বা আর্থিক সহযোগিতা দিয়েও বিভিন্ন সময়ে সহযোগিতা করেছেন। সাওল হার্ট সেন্টার, বাংলাদেশের একজন অকৃত্রিম বন্ধু এবং শুভাকাক্সক্ষী ছিলেন মানবদরদী, সাধারণ জীবনের অধিকারী ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে সৃজনশীল, গণমানুষের স্বাস্থ্যসেবার অগ্রদূত, বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু, জনদরদী, খাঁটি দেশপ্রেমিক, সৎ, আদর্শবান, নীতিনিষ্ঠ, সাচ্চা বাঙালি, সত্য উচ্চারণে নির্ভীক, দুঃসাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে-বাংলাদেশে বিনা রিং, বিনা অপারেশনে হৃদরোগ চিকিৎসার পথিকৃৎ সাওল হার্ট সেন্টার (বিডি) লি.-এর পক্ষ থেকে এই মহান বাঙালির প্রতি আমরা হৃদয় উজাড় ভালোবাসা এবং গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রতি সাওল হার্ট সেন্টার, বাংলাদেশের শ্রদ্ধা নিবেদন। লেখক : কবি
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
